Loading the player...


INFO:
ঘুম ভাঙ্গার পর-ই জানালার দিকে চোখ পড়লো Yn এর।পুবের জানালা চিরে সূর্যের আলোর ছোঁয়ায় খুব ভোরে-ই ঘুম ভেঙ্গে গেল। চারদিকে এখনো কুয়াশা ভরা। ঠিক মত কোনো কিছু এখনো দেখা যাচ্ছে না।মেঘের মত কুয়াশা গুলোও যেন ভাসছে। কনকনে শীতের কারণে এখনো লেপ মুড়ি দিয়ে বসে আছে Yn। হঠাত হিমেল বাতাসে ভেসে আসা মিষ্টি গন্ধ কলিকে মুগ্ধ করে তুলল। ছোটো ছোটো চোখ গুলো কচলে, আড়মোড়া দিয়ে বিছানায় থেকে নামার সময় ঘরের চারদিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিল, মা-বাবা কেউ কী নেই? কাউকে দেখতে না পেয়ে নিশ্চিত হলো, 'সম্ভবত মা রান্না ঘরে, আর বাবা উঠানে বসে খবরের কাগজ পড়ছে।' তাই আর কিছু না ভেবে ছোটো ছোটো পা গুলো দিয়ে ঘরের বাহিরে চলে গেল অদম্য কৌতূহল নিয়ে। বাহিরে এসে দেখে উনুনে খেজুরের রস জাল দেওয়া হচ্ছে, শীতের পিঠার জন্য। Yn দৌঁড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরল, আজ পিঠার নাস্তা হবে? কী মজা কী মজা বলে Yn উঠানে লাফাতে লাগলো। আর ছোটো দু'হাত দিয়ে তালি বাজাতে লাগলো। Yn এর বাবা আসলাম আমীর, মেয়ের এই পাগলামি গুলো দু'চোখ ভরে উপভোগ করেন। একমাত্র মেয়ে তার। তাই'তো মেয়েকে অনেক বেশি আদরে যত্নে মানুষ করছেন। সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্ম না নিলেও, গরীব বাবা-র একমাত্র রাজকন্যা সে। —'মা Yn! পিঠার খুশিতে এভাবে লাফালে হবে? এবার শান্ত হও। স্কুলে যেতে হবে না? যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে এস। তারপর আমরা সবাই মিলে পিঠা দিয়ে আজ নাস্তা করতে বসমু। ঠিক আছে!' -'স্কুলের জন্য তৈরি হব এত তাড়াতাড়ি! কিন্তু কেন বাবা? এখনো তো মেলা সময় বাকি আছে।' -'না মা! আমার কাজ আছে স্কুলে। তাই আজ একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তর্ক না করে, বাবা-র কথা শুনো। ভেতরে গিয়ে তৈরি হয়ে আস।' -'বাবার কথা মত Yn___বাধ্য মেয়ের মত তৈরি হয়ে বাবা আর মায়ের মাঝখানে বসে নাস্তা করে নেয়। এর পর মা'য়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, বাবার হাত ধরে রওনা দেয় স্কুলের পথের দিকে।' শীত মৌসুমে বাংলার গ্রামে আসে বিশাল পরিবর্তন।তাই'তো Yn বাবার সাথে স্কুলের পথে অগ্রসর হচ্ছে আর রাস্তার দু'পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের শীতের সবজি গুলো দেখছে। ফসলের মাঠ পাড় হলে-ই দূর দূরান্তে যত দূর চোখ যাচ্ছে হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে সরষে ফুলে মাঠ। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে বাজারের সামনে এসে পড়ল Yn আর আসলাম আমীর। সামনে একটা চা দোকান থেকে কলিকে একটা চিপস কিনে দেন তিনি, টিফিনে খাওয়ার জন্য। কারণ Yn এ ছাড়া আর কিছু-ই খেতে চায় না। দুজন-ই একত্রে স্কুলের ভেতর প্রবেশ করে। কলি নিজের ক্লাস রুমে চলে যায়, আর আসলাম আমীর নিজের অফিস কক্ষে। তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আজ জিওন বাড়ির কিছু লোক আসবে স্কুল তদারকির জন্য। তাই আসলাম আমীর কে আজ স্কুলে তাড়াতাড়ি আসতে হলো। গ্রামের এই স্কুল, গ্রামের সব থেকে বড়ো হসপিটাল, এমনকি বাজারের অর্ধেকের মলিক জিওন পরিবার।গ্রামের বাগান বাড়িতে বছরের প্রায় সময় পুরো পরিবার ঘুরতে আসে। তবে এবার জিওন পরিবারের ছেলেরা আর তার কিছু ফ্রেন্ডসরা মিলে নাকি এসেছে।গ্রাম জুড়ে জায়গা সম্পত্তি আরো অনেক কিছু আছে যা আসলাম আমীর জানেও না। আর আজ জিওন পরিবারের ছেলেরা-ই আসবে স্কুল তদারকির জন্য। এই গ্রামের ধনী পরিবারের মধ্যে তারা-ই আছে। তবে এই পরিবারের সবাই শহরে থাকে। জিওন পরিবারে আজমাল ও আজহার দু'ভাই। আজমালের এক ছেলে ও এক মেয়ে। আর আজহারের দু'ছেলে এক মেয়ে। Yn টিফিন প্রিয়ডে স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে চিপস খাচ্ছিল আর শিলার সাথে গল্প করছিল। শিলা Yn এর বান্ধবী। পুরো স্কুলে Yn এর এই একটা মাত্র-ই বান্ধবী।Yn কারো সাথে তেমন মিশে না, বা মিশতে চায়ও না। বড্ড হেসিটেট হয় ওর। হঠাত Yn এর কানে আসল, প্রিন্স এসেছে দেখ। কিছু মেয়ে স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে স্কুলের বারান্দায় দেখছে আর হাসাহাসি করছে। আমাদের প্রিন্স, আজ অনেকদিন পর এসেছে। Yn ও সে দিকে তাকাল। প্রিন্স এসেছে। আমার প্রিন্স।Yn চিপসের পেকেটটা ফেলে দিয়ে বারান্দার দিকে দৌঁড় দিল। সেখানে জাংকুক, তার কাজিন ইনাম আর মাহির দাঁড়িয়ে ছিল। জাংকুক ইনাম আর মাহিরের সাথে কথা বলছিল, এমন সময় একটা ছোটো মেয়ে কোমরে হাত রেখে জাংকুক'র সামনে এসে হাজির হয়ে বলে_____ -'তুমি কি আমার প্রিন্স? আমাকে নিতে এসেছ। মা বলছে____একদিন একটা প্রিন্স সাদা ঘোড়াতে করে এসে আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে। তুমি কী সেই প্রিন্স?'